সত্য ধর্মের কাহিনি
হিন্দু ধর্ম মতে- বিষ্ণুর দ্বাপর যুগ-এর একজন অবতার এবং মোট দশম অবতারের অষ্টম অবতার। বসুদেবের ঔরসে দেবকীর অষ্টম গর্ভে কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল। কংসনামক এক অত্যাচারী রাজার অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দেবতারা ব্রহ্মার শরণাপন্ন হলে, ব্রহ্মাসকল দেবতাদের নিয়ে সমুদ্রের ধারে বসে বিষ্ণুর আরাধনা শুরু করেন। বিষ্ণুসে আরাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর সাদা ও কালো রঙের দুটি চুল দিয়ে বললেন যে, বসুদেবের ঔরসে দেবকীর সন্তান হিসাবে কৃষ্ণ হয়ে জন্মাবেন। কৃষ্ণের প্রতীক হলো কালো চুল। তাঁর সহযোগী হবে বলরাম, এর প্রতীক সাদা চুল। এই জন্মে তিনি কংসাসুরকে হত্যা করবেন। উল্লেখ্য বসুদেবের অপর স্ত্রী রোহিণীর গর্ভে বলরাম জন্মেছিলেন।
দেবকীর পিতা দেবক ও কংসের পিতা উগ্রসেন আপন দুই ভাই ছিলেন। সেই সূত্রে
কংস ছিলেন দেবকীর কাকাতো ভাই অর্থাৎ কংস ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের মামা। দেবর্ষি
নারদ এসে কংসকে কৃষ্ণ-বলরাম-এরজন্মের কারণ বর্ণনা করে যান। এই সংবাদ পেয়ে
কংসদেবকীর গর্ভজাত সকল সন্তানকে জন্মের পরপরই হত্যা করতে থাকলেন।
শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয় দ্বাপরযুগের শেষে ভাদ্র-রোহিণী নক্ষত্রে, এক
ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ রাত্রিতে। জন্মের পরপরই বসুদেব কংসেরভয়ে এই শিশুটিকে
ব্রজধামে নন্দের বাড়িতে রেখে আসেন এবং তাঁর সদ্যজাতা কন্যাকে আনেন।
ব্রহ্ম-বৈবর্ত্ত পুরাণের মতে এই কন্যা ছিলেন দুর্গা। এই পুরাণে এই সদ্যজাতা
কন্যাকে অংশা নামে অভিহিত করা হয়েছে। বিষ্ণুর অনুরোধে তিনি যশোদার গর্ভে
জন্মগ্রহণ করেন।
[ব্রহ্ম-বৈবর্ত্ত পুরাণ, শ্রীকৃষ্ণখণ্ড, সপ্তম অধ্যায়]
নন্দপত্নী যশোদা কৃষ্ণকে আপন পুত্র হিসাবেই পালন করেন। কৃষ্ণের জীবিত থাকার খবর পেয়ে- তাঁকে হত্যা করার জন্য- কংস বেশ কিছু দৈত্য-দানব পাঠান। এদের সবাইকে বিভিন্ন কৌশলে কৃষ্ণ হত্যা করেন এবং একই সাথে বিভিন্ন অলৌকিক কর্মকাণ্ড ঘটে। কৃষ্ণ কর্তৃক কংসবধের আগে যে ঘটনা ঘটে, - সে গুলো হলো-
*
পুতনা হত্যা : কংস পুতনা নামক এক দানবীকে প্রেরণ করেন। পুতনা মায়াবলে সুন্দরী স্ত্রী-মূর্তি ধারণ করে নন্দের গৃহে আসেন। সেখানে কৃষ্ণকে কপট স্নেহে আদর করতে করতে বিষ মাখা স্তন কৃষ্ণের মুখে দেন। কিন্তু কৃষ্ণ পুতনার স্তনপানকালে তাঁর জীবনীশক্তি শোষণ করে তাঁকে হত্যা করেন। মৃত্যুকালে পুতনা দানবীর রূপ ধারণ করে চিৎকার করতে করতে বিশাল জায়গা জুড়ে পতিত হন।
*
তৃণাবর্ত হত্যা : এরপর কংস কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য তৃণাবর্ত নামক অনুচর পাঠান। তৃণাবর্ত মথুরায় এসে ঘূর্ণিবায়ু সৃষ্টি করে কৃষ্ণকে আকাশে উঠিয়ে নেন। এই সময় কৃষ্ণ নিজের শরীরকে এতটা বৃদ্ধি করেন যে- তৃণাবর্ত কৃষ্ণকে বহন করতে অসমর্থ হন। একই সময় কৃষ্ণ তৃণাবর্তের গলা টিপে ধরলে- তৃণাবর্ত আকাশ থেকে পাথরের উপর পতিত হন এবং মৃত্যুবরণ করেন।
*
বত্সাসুর ও বকাসুর হত্যা : এর কিছুদিন পর কংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কৃষ্ণকে নিয়ে নন্দ বৃন্দাবনে চলে আসেন। এখানে আসার পর কংস কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য বত্সাসুর নামক এক অসুরকে পাঠান। এই অসুর বৃন্দাবনে বত্সরূপ (বাছুরের রূপ) ধরে অন্যান্য গরুর সাথে বিচরণ করতে থাকেন। কৃষ্ণ এই বিষয়ে অবগত হয়ে বাছুররূপী অসুরের পিছনের দুই পা ধরে মাথার উপর ঘুরিয়ে কপিত্থ গাছের উপর নিক্ষেপ করে হত্যা করেন। এরপর কংসের আদেশে বকাসুর কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য পাখির রূপ ধরে ব্রজধামে উপস্থিত হন। ইনি কৃষ্ণকে গ্রাস করতে উদ্যত হলে কৃষ্ণ তাঁর দুই ঠোঁট ধরে একে চিরে ফেলে হত্যা করেন।
*
কেশী হত্যা : এরপর কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য কংস তাঁর দানব অনুচর কেশীকে প্রেরণ করেন। কেশী ঘোড়ার রূপ ধরে গোপদের উপর অত্যাচার শুরু করলে- কৃষ্ণ এর প্রতিকার করার জন্য কেশীর মুখোমুখি হন। কেশী কৃষ্ণকে গ্রাস করতে উদ্যত হলে- কৃষ্ণ তাঁর বিশাল বাহু কেশীর মুখের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।
*
অঘাসুর হত্যা : এরপর কংসের আদেশে অঘাসুর কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য বৃন্দাবনে আসেন। অঘাসুর ছিলেন পূর্বোক্ত পূতনা ও বকাসুরের ভাই। ইনি কংসের একজন সেনাপতি হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। অঘাসুর বৃন্দাবনে এসে মায়াবলে অজগর রূপ ধরে মুখ প্রসারিত করে শ্রীকৃষ্ণের অপেক্ষায় ছিলেন। শ্রীকৃষ্ণের বালক সহচরেরা, এই প্রসারিত মুখ দেখে পর্বতগুহা মনে করে তাতে প্রবেশ করেন। শ্রীকৃষ্ণ অঘাসুরের প্রকৃত পরিচয় জেনেও উক্ত মুখে প্রবেশ করে আপন দেহকে প্রসারিত করলে, অঘাসুর শ্বাসরোধ হয়ে মারা যান।
*
কালিয়দমন : এরপর কৃষ্ণ কালিয় নামক একটি বিষাক্ত সাপকে হত্যা করেন। উল্লেখ্য যমুনা নদীর এক আবর্তে বহুফনা বিশিষ্ট এই সাপ বহুদিন ধরে বসবাস করতো। বিষ্ণু পুরাণের মতে এর ফনা সংখ্যা ছিল তিনটি, হরিবংশের মতে- পাঁচটি, ভাগবতে'র মতে সহস্রটি। এই সাপটি দীর্ঘদিন ধরে তার স্ত্রী, পুত্র, পৌত্র নিয়ে এই হ্রদে বসবাস করতো। এই সাপের বিষে আবর্তের জল বিষাক্ত হয়ে পড়েছিল। বিষের কারণে এই জলাশয়ের নিকটে কোন গাছ জন্মাতো না বা আবর্তের উপর দিয়ে কোন পাখি উড়ে যেতে পারতো না। জীবদের রক্ষার জন্য কৃষ্ণ লাফ দিয়ে উক্ত আবর্তে প্রবেশ করেন। এরপর কালিয়-এর ফনার উপর নৃত্য করে করে কৃষ্ণ তাকে হত্যা করেন। একেই কালিয়দমন বলা হয়। কৃষ্ণ এই সাপের পুরো পরিবারকে একইভাবে হত্যা করে কালিন্দী নদীতে নিক্ষেপ করেন।
*
কৃষ্ণের গোবর্ধন পর্বত উত্তোলন : বৃন্দাবনের গোপরা প্রতিবৎসর ইন্দ্রযজ্ঞ করতো। কৃষ্ণ এর বিরোধিতা করে বলেন যে- ইন্দ্রেরজ্ঞের কারণে বৃষ্টিপাত হয় বটে কিন্তু এই পূজা কৃষকদের জন্য। যেহেতু গোপদের প্রধান অবলম্বন গাভী, সে কারণে গোপদের উচিত্ গাভী পূজা করা। ফলে সে বৎসর ইন্দ্রযজ্ঞ বন্ধ হয়ে যায়। এতে ইন্দ্র ক্ষুব্ধ হয়ে বৃন্দাবনে প্রবল বর্ষণ ঘটালেন। কৃষ্ণ এর প্রতিকারের জন্য নিকটস্থ গোবর্ধন পর্বত উপড়িয়ে বৃন্দাবনের উপর তুলে ধরলেন। ফলে প্রবল বৃষ্টি থেকে বৃন্দাবন রক্ষা পায়। কৃষ্ণ এক সপ্তাহ এই পর্বত ধারণ করার পর ইন্দ্র পরাজয় মেনে, বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দেন।
রাধাকৃষ্ণ-লীলা
এই ঘটনার পরপরই আমরা বৃন্দাবনে রাধাকৃষ্ণের লীলা অংশ পাই। এই লীলা অংশ হিন্দু পৌরাণিক গ্রন্থগুলিতে সমানভাবে দেখা যায় না। এই লীলা অংশে আমরা যে কাহিনী দেখতে পাই তা হলো-
রাধা-কৃষ্ণের উৎপত্তি : পদ্মপুরাণ ও ভাগবতের মতে- গোলকধামে কৃষ্ণের বামপাশ হতে রাধার উত্পত্তি হয়েছিল। জন্মের পর পরই ইনি কৃষ্ণের আরাধনা শুরু করেন। ইনি উত্পত্তিকালে ১৬ বৎসরের নব-যৌবনারূপে কৃষ্ণের সিংহাসনের বামপাশে অবস্থান নেন। এই সময় রাধার লোমকূপ হতে লক্ষকোটি গোপিকা ও কৃষ্ণের লোমকূপ থেকে লক্ষকোটি গোপের জন্ম হয়।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের মতে- একবার বিষ্ণু রম্যবনে প্রবেশ করে রমণ ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ফলে কৃষ্ণের ডান অংশ থেকে কৃষ্ণমূর্তি ও বাম অংশ থেকে রাধা মূর্তি প্রকাশ পায়। রাধা কৃষ্ণকে কামাতুর দেখে তাঁর দিকে অগ্রসর হন। রা অর্থ লাভ এবং ধা অর্থ ধাবমান। ইনি অগ্রসর হয়ে কৃষ্ণকে লাভ করেছিলেন বলে- এঁর নাম হয়েছিল রাধা।
একবার কৃষ্ণ রাধার অজ্ঞাতে বিরজা নামক এক গোপীর সাথে মিলিত হন। দূতীদের মুখে রাধা এই সংবাদ পেয়ে অনুসন্ধানের জন্য অগ্রসর হলে- সুদামা কৃষ্ণকে উক্ত সংবাদ দেন। কৃষ্ণ এই সংবাদ পেয়ে বিরজাকে ত্যাগ করে অন্তর্হিত হন। বিরজা এই দুখে প্রাণত্যাগ করে নদীরূপে প্রবাহিত হন। রাধা পরে কৃষ্ণের দেখা পেয়ে তাঁকে তীব্রভাবে ভৎর্সনা করলে- সুদামা তা সহ্য করতে না পেরে-রাধাকে তিরস্কার করেন। রাধা এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সুদামাকে অসুর হয়ে জন্মনোর অভিশাপ দেন। সুদামাও ক্ষুব্ধ হয়ে রাধাকে গোপী হয়ে পৃথিবীতে জন্মানোর অভিশাপ দিয়ে বলেন যে- সহস্র বত্সর কৃষ্ণবিরহ যন্ত্রণা ভোগ করার পর তিনি পৃথিবীতে কৃষ্ণের সাথে মিলিত হবেন।
রাধা'কে সকল গোপীদের মধ্য সর্বপ্রধানা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। মূলতঃ বৃন্দাবন লীলা রাধাকে কেন্দ্র করে উঠা উপাখ্যান মাত্র। বৃন্দাবনে রাধা ছিলেন কৃষ্ণের চেয়ে বড়। প্রথমাবস্থায় কৃষ্ণ রাধাকে পাবার জন্য বিবিধ ছলের আশ্রয় নেন। পরে উভয়ের মধ্যে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। এই সম্পর্ক উন্নয়নে যে সকল কাহিনী পাওয়া যায়- তা হলো- কৃষ্ণের সাথে রাধা সহ অন্যান্য গোপিনীদের সম্পর্ক গড়ে উঠে। গোপীরা কৃষ্ণকে স্বামী হিসাবে পাবার জন্য একমাসের কাত্যায়ন ব্রত করেন। এই এক মাস গোপীরা দলবদ্ধভাবে যমুনা নদীতে এসে এক সাথে স্নান করতো। এই সময় গোপীরা সকল বস্ত্র নদীর পারে রেখে উলঙ্গ অবস্থায় নদীতে স্নান করতে নামতো। কৃষ্ণ এই ব্রতের শেষ দিনে গোপীদের অনুসরণ করে নদীর পারে আসেন। গোপীরা বস্ত্র ত্যাগ করে নদীতে নামলে কৃষ্ণ পরিত্যাক্ত বস্ত্রগুলি অপহরণ করেন। এরপর কৃষ্ণের কাছে গোপীরা নিজেদের সমর্পণ করে বস্ত্র সংগ্রহ করলেন। এরপর গোপীরা গৃহত্যাগ করে কৃষ্ণের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য কুঞ্জবনে আসে। এবং সেখানে গোপীরা ঈশ্বর জ্ঞানে তাঁর সাথে মিলিত হয়। কথিত আছে কৃষ্ণ নিজেকে গোপীদের মাঝে ছড়িয়ে দেন। ফলে প্রতি গোপীই একই সময়ে কৃষ্ণের সান্নিধ্য পান। কংসবধের জন্য কৃষ্ণ বৃন্দাবন পরিত্যাগ করেন।
কৃষ্ণ-বলরাম কর্তৃক কংসবধ : কৃষ্ণকে হত্যা করার কৌশল হিসাবে কংসএকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এই আয়োজনে যোগদানের জন্য কংসঅক্রুর নামক এক যাদবকে পাঠান। এই আমন্ত্রণ কৃষ্ণ-বলরাম গ্রহণ করেন এবং কংসের দরবারের পথে রওনা দেন। পথে একজন কুব্জার সাথে দেখা হয়। কৃষ্ণা তাঁকে সুন্দরী নারীতে রূপান্তরিত করে দেন। এরপর কৃষ্ণ-বলরাম কংসকে হত্যা করে কংসের পিতা উগ্রসেনকে মথুরার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করেন।
শঙ্খাসুর হত্যা : কংস বধের পর কৃষ্ণ-বলরাম সান্দীপন নামক এক অস্ত্রগুরু কাছে কাছে ধনুর্বেদ ও আয়ুর্বেদ শেখেন। উল্লেখ্য প্রভাসতীর্থে স্নানের সময় পঞ্চজন নামক এক শঙ্খাসুর সান্দীপনের পুত্রকে সাগর গর্ভে নিয়ে যান। এই অসুর একটি বিশাল দুর্ভেদ্য শঙ্খের মধ্যে বসবাস করতেন। কৃষ্ণ-বলরামের শিক্ষা শেষে গুরুদক্ষিণা হিসাবে সান্দীপন কৃষ্ণ-বলরামের কাছে দাবী করেন যে- তাঁরা যেন শঙ্খাসুরকে হত্যা করে তাঁর পুত্রকে এনে দেন। এই দাবী অনুসারে কৃষ্ণ-বলরাম এই অসুরকে হত্যা করে মুনির পুত্রকে উদ্ধার করেন। এই অসুরের আবাসস্থলের শঙ্খ দিয়ে কৃষ্ণ পাঞ্চজন্য শঙ্খ তৈরি তা নিজের জন্য গ্রহণ করেন।
জরাসন্ধের সাথে দ্বন্দ্ব: কংসেরদুই স্ত্রী ছিলেন জরাসন্ধের দুই কন্যাঅস্তি ও প্রাপ্তি কৃষ্ণ কংসকে হত্যা করার পর জরাসন্ধ পর পর সতের বার মথুরা আক্রমণ করেন। কিন্তু রণ কৌশলের কারণে, মথুরা দখল করতে সক্ষম হন নি। বারবার আক্রমণে অতীষ্ট হয়ে কৃষ্ণ দ্বারকায় যাদবদের পুরী নির্মাণ করতে আদেশ দেন। কিন্তু যাদবরা দ্বারকায় যাবার আগেই জরাসন্ধ আবার মথুরা আক্রমণ করেন। এবার সঙ্গী ছিল কালযবন নামক এক কৃষ্ণ বিদ্বেষী রাজা। কৃষ্ণ এবার কালযবনকে হত্যা করার জন্য একটি কৌশলের আশ্রয় নিলেন। ইনি কালযবনকে কৌশলে দেখা দিলে, কালযবন কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য তাঁকে অনুসরণ করতে থাকে। কৃষ্ণ পলায়নের ভান করে দূরবর্তী এক পাহাড়ের গুহায় প্রবেশ করে। এই গুহায় মুচুকুন্দ নামক এক ঋষি ঘুমিয়ে ছিলেন। কালযবন কৃষ্ণের অনুসরণ করে উক্ত গুহায় প্রবেশ করে এবং অন্ধকারে মুচুকুন্দকে কৃষ্ণ মনে করে পদাঘাত করে। মুচুকুন্দ ঘুম ভেঙে কালযবনের দিকে দৃষ্টিপাত করা মাত্র- কালযবন ভষ্মীভূত হয়। এরপরজরাসন্ধ নিজেই আক্রমণ করতে এলে, জরাসন্ধের হংস নামক একজন অনুচর বলরামের হাতে নিহত হন। হংসের ভাই ডিম্বক এই দুঃখে যমুনা নদীতে আত্মহত্যা করেন। এই দুই বীরে মৃত্যুর পর জরাসন্ধ দুঃক্ষভারাক্রান্ত মনে নিজ রাজত্বে ফিরে যান।
রুক্মিণীকে বিবাহ : বিদর্ভরাজ ভীষ্মকের কন্যা রুক্মিণী কৃষ্ণকে মনে মনে পতিত্ব বরণ করে চরমুখে কৃষ্ণের কাছে বিবাহের প্রস্তাব দেয়। এই কারণে কৃষ্ণ, প্রথমে রুক্মিণীর পিতা ভীষ্মকের কাছে উপস্থিত হয়ে এই বিবাহে সম্মতি প্রার্থনা করেন। কিন্তু ভীষ্মক তাতে অসম্মতি জানান। এদিকে ভীষ্মক তার কন্যার জন্য স্বয়ংবর সভার আয়োজন করলে- কৃষ্ণ-বলরামকে সাথে নিয়ে, উক্ত সভা থেকে রুক্মিণীকে হরণ করেন। এই অপহরণ কালে শিশুপাল নামক একজন রাজা বাধা দিলে- সে কৃষ্ণের কাছে পরাজিত হয়ে স্বদেশে পলায়ন করে
[ব্রহ্ম-বৈবর্ত্ত পুরাণ, শ্রীকৃষ্ণখণ্ড, সপ্তম অধ্যায়]
নন্দপত্নী যশোদা কৃষ্ণকে আপন পুত্র হিসাবেই পালন করেন। কৃষ্ণের জীবিত থাকার খবর পেয়ে- তাঁকে হত্যা করার জন্য- কংস বেশ কিছু দৈত্য-দানব পাঠান। এদের সবাইকে বিভিন্ন কৌশলে কৃষ্ণ হত্যা করেন এবং একই সাথে বিভিন্ন অলৌকিক কর্মকাণ্ড ঘটে। কৃষ্ণ কর্তৃক কংসবধের আগে যে ঘটনা ঘটে, - সে গুলো হলো-
*
পুতনা হত্যা : কংস পুতনা নামক এক দানবীকে প্রেরণ করেন। পুতনা মায়াবলে সুন্দরী স্ত্রী-মূর্তি ধারণ করে নন্দের গৃহে আসেন। সেখানে কৃষ্ণকে কপট স্নেহে আদর করতে করতে বিষ মাখা স্তন কৃষ্ণের মুখে দেন। কিন্তু কৃষ্ণ পুতনার স্তনপানকালে তাঁর জীবনীশক্তি শোষণ করে তাঁকে হত্যা করেন। মৃত্যুকালে পুতনা দানবীর রূপ ধারণ করে চিৎকার করতে করতে বিশাল জায়গা জুড়ে পতিত হন।
*
তৃণাবর্ত হত্যা : এরপর কংস কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য তৃণাবর্ত নামক অনুচর পাঠান। তৃণাবর্ত মথুরায় এসে ঘূর্ণিবায়ু সৃষ্টি করে কৃষ্ণকে আকাশে উঠিয়ে নেন। এই সময় কৃষ্ণ নিজের শরীরকে এতটা বৃদ্ধি করেন যে- তৃণাবর্ত কৃষ্ণকে বহন করতে অসমর্থ হন। একই সময় কৃষ্ণ তৃণাবর্তের গলা টিপে ধরলে- তৃণাবর্ত আকাশ থেকে পাথরের উপর পতিত হন এবং মৃত্যুবরণ করেন।
*
বত্সাসুর ও বকাসুর হত্যা : এর কিছুদিন পর কংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কৃষ্ণকে নিয়ে নন্দ বৃন্দাবনে চলে আসেন। এখানে আসার পর কংস কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য বত্সাসুর নামক এক অসুরকে পাঠান। এই অসুর বৃন্দাবনে বত্সরূপ (বাছুরের রূপ) ধরে অন্যান্য গরুর সাথে বিচরণ করতে থাকেন। কৃষ্ণ এই বিষয়ে অবগত হয়ে বাছুররূপী অসুরের পিছনের দুই পা ধরে মাথার উপর ঘুরিয়ে কপিত্থ গাছের উপর নিক্ষেপ করে হত্যা করেন। এরপর কংসের আদেশে বকাসুর কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য পাখির রূপ ধরে ব্রজধামে উপস্থিত হন। ইনি কৃষ্ণকে গ্রাস করতে উদ্যত হলে কৃষ্ণ তাঁর দুই ঠোঁট ধরে একে চিরে ফেলে হত্যা করেন।
*
কেশী হত্যা : এরপর কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য কংস তাঁর দানব অনুচর কেশীকে প্রেরণ করেন। কেশী ঘোড়ার রূপ ধরে গোপদের উপর অত্যাচার শুরু করলে- কৃষ্ণ এর প্রতিকার করার জন্য কেশীর মুখোমুখি হন। কেশী কৃষ্ণকে গ্রাস করতে উদ্যত হলে- কৃষ্ণ তাঁর বিশাল বাহু কেশীর মুখের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।
*
অঘাসুর হত্যা : এরপর কংসের আদেশে অঘাসুর কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য বৃন্দাবনে আসেন। অঘাসুর ছিলেন পূর্বোক্ত পূতনা ও বকাসুরের ভাই। ইনি কংসের একজন সেনাপতি হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। অঘাসুর বৃন্দাবনে এসে মায়াবলে অজগর রূপ ধরে মুখ প্রসারিত করে শ্রীকৃষ্ণের অপেক্ষায় ছিলেন। শ্রীকৃষ্ণের বালক সহচরেরা, এই প্রসারিত মুখ দেখে পর্বতগুহা মনে করে তাতে প্রবেশ করেন। শ্রীকৃষ্ণ অঘাসুরের প্রকৃত পরিচয় জেনেও উক্ত মুখে প্রবেশ করে আপন দেহকে প্রসারিত করলে, অঘাসুর শ্বাসরোধ হয়ে মারা যান।
*
কালিয়দমন : এরপর কৃষ্ণ কালিয় নামক একটি বিষাক্ত সাপকে হত্যা করেন। উল্লেখ্য যমুনা নদীর এক আবর্তে বহুফনা বিশিষ্ট এই সাপ বহুদিন ধরে বসবাস করতো। বিষ্ণু পুরাণের মতে এর ফনা সংখ্যা ছিল তিনটি, হরিবংশের মতে- পাঁচটি, ভাগবতে'র মতে সহস্রটি। এই সাপটি দীর্ঘদিন ধরে তার স্ত্রী, পুত্র, পৌত্র নিয়ে এই হ্রদে বসবাস করতো। এই সাপের বিষে আবর্তের জল বিষাক্ত হয়ে পড়েছিল। বিষের কারণে এই জলাশয়ের নিকটে কোন গাছ জন্মাতো না বা আবর্তের উপর দিয়ে কোন পাখি উড়ে যেতে পারতো না। জীবদের রক্ষার জন্য কৃষ্ণ লাফ দিয়ে উক্ত আবর্তে প্রবেশ করেন। এরপর কালিয়-এর ফনার উপর নৃত্য করে করে কৃষ্ণ তাকে হত্যা করেন। একেই কালিয়দমন বলা হয়। কৃষ্ণ এই সাপের পুরো পরিবারকে একইভাবে হত্যা করে কালিন্দী নদীতে নিক্ষেপ করেন।
*
কৃষ্ণের গোবর্ধন পর্বত উত্তোলন : বৃন্দাবনের গোপরা প্রতিবৎসর ইন্দ্রযজ্ঞ করতো। কৃষ্ণ এর বিরোধিতা করে বলেন যে- ইন্দ্রেরজ্ঞের কারণে বৃষ্টিপাত হয় বটে কিন্তু এই পূজা কৃষকদের জন্য। যেহেতু গোপদের প্রধান অবলম্বন গাভী, সে কারণে গোপদের উচিত্ গাভী পূজা করা। ফলে সে বৎসর ইন্দ্রযজ্ঞ বন্ধ হয়ে যায়। এতে ইন্দ্র ক্ষুব্ধ হয়ে বৃন্দাবনে প্রবল বর্ষণ ঘটালেন। কৃষ্ণ এর প্রতিকারের জন্য নিকটস্থ গোবর্ধন পর্বত উপড়িয়ে বৃন্দাবনের উপর তুলে ধরলেন। ফলে প্রবল বৃষ্টি থেকে বৃন্দাবন রক্ষা পায়। কৃষ্ণ এক সপ্তাহ এই পর্বত ধারণ করার পর ইন্দ্র পরাজয় মেনে, বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দেন।
রাধাকৃষ্ণ-লীলা
এই ঘটনার পরপরই আমরা বৃন্দাবনে রাধাকৃষ্ণের লীলা অংশ পাই। এই লীলা অংশ হিন্দু পৌরাণিক গ্রন্থগুলিতে সমানভাবে দেখা যায় না। এই লীলা অংশে আমরা যে কাহিনী দেখতে পাই তা হলো-
রাধা-কৃষ্ণের উৎপত্তি : পদ্মপুরাণ ও ভাগবতের মতে- গোলকধামে কৃষ্ণের বামপাশ হতে রাধার উত্পত্তি হয়েছিল। জন্মের পর পরই ইনি কৃষ্ণের আরাধনা শুরু করেন। ইনি উত্পত্তিকালে ১৬ বৎসরের নব-যৌবনারূপে কৃষ্ণের সিংহাসনের বামপাশে অবস্থান নেন। এই সময় রাধার লোমকূপ হতে লক্ষকোটি গোপিকা ও কৃষ্ণের লোমকূপ থেকে লক্ষকোটি গোপের জন্ম হয়।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের মতে- একবার বিষ্ণু রম্যবনে প্রবেশ করে রমণ ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ফলে কৃষ্ণের ডান অংশ থেকে কৃষ্ণমূর্তি ও বাম অংশ থেকে রাধা মূর্তি প্রকাশ পায়। রাধা কৃষ্ণকে কামাতুর দেখে তাঁর দিকে অগ্রসর হন। রা অর্থ লাভ এবং ধা অর্থ ধাবমান। ইনি অগ্রসর হয়ে কৃষ্ণকে লাভ করেছিলেন বলে- এঁর নাম হয়েছিল রাধা।
একবার কৃষ্ণ রাধার অজ্ঞাতে বিরজা নামক এক গোপীর সাথে মিলিত হন। দূতীদের মুখে রাধা এই সংবাদ পেয়ে অনুসন্ধানের জন্য অগ্রসর হলে- সুদামা কৃষ্ণকে উক্ত সংবাদ দেন। কৃষ্ণ এই সংবাদ পেয়ে বিরজাকে ত্যাগ করে অন্তর্হিত হন। বিরজা এই দুখে প্রাণত্যাগ করে নদীরূপে প্রবাহিত হন। রাধা পরে কৃষ্ণের দেখা পেয়ে তাঁকে তীব্রভাবে ভৎর্সনা করলে- সুদামা তা সহ্য করতে না পেরে-রাধাকে তিরস্কার করেন। রাধা এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সুদামাকে অসুর হয়ে জন্মনোর অভিশাপ দেন। সুদামাও ক্ষুব্ধ হয়ে রাধাকে গোপী হয়ে পৃথিবীতে জন্মানোর অভিশাপ দিয়ে বলেন যে- সহস্র বত্সর কৃষ্ণবিরহ যন্ত্রণা ভোগ করার পর তিনি পৃথিবীতে কৃষ্ণের সাথে মিলিত হবেন।
রাধা'কে সকল গোপীদের মধ্য সর্বপ্রধানা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। মূলতঃ বৃন্দাবন লীলা রাধাকে কেন্দ্র করে উঠা উপাখ্যান মাত্র। বৃন্দাবনে রাধা ছিলেন কৃষ্ণের চেয়ে বড়। প্রথমাবস্থায় কৃষ্ণ রাধাকে পাবার জন্য বিবিধ ছলের আশ্রয় নেন। পরে উভয়ের মধ্যে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। এই সম্পর্ক উন্নয়নে যে সকল কাহিনী পাওয়া যায়- তা হলো- কৃষ্ণের সাথে রাধা সহ অন্যান্য গোপিনীদের সম্পর্ক গড়ে উঠে। গোপীরা কৃষ্ণকে স্বামী হিসাবে পাবার জন্য একমাসের কাত্যায়ন ব্রত করেন। এই এক মাস গোপীরা দলবদ্ধভাবে যমুনা নদীতে এসে এক সাথে স্নান করতো। এই সময় গোপীরা সকল বস্ত্র নদীর পারে রেখে উলঙ্গ অবস্থায় নদীতে স্নান করতে নামতো। কৃষ্ণ এই ব্রতের শেষ দিনে গোপীদের অনুসরণ করে নদীর পারে আসেন। গোপীরা বস্ত্র ত্যাগ করে নদীতে নামলে কৃষ্ণ পরিত্যাক্ত বস্ত্রগুলি অপহরণ করেন। এরপর কৃষ্ণের কাছে গোপীরা নিজেদের সমর্পণ করে বস্ত্র সংগ্রহ করলেন। এরপর গোপীরা গৃহত্যাগ করে কৃষ্ণের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য কুঞ্জবনে আসে। এবং সেখানে গোপীরা ঈশ্বর জ্ঞানে তাঁর সাথে মিলিত হয়। কথিত আছে কৃষ্ণ নিজেকে গোপীদের মাঝে ছড়িয়ে দেন। ফলে প্রতি গোপীই একই সময়ে কৃষ্ণের সান্নিধ্য পান। কংসবধের জন্য কৃষ্ণ বৃন্দাবন পরিত্যাগ করেন।
কৃষ্ণ-বলরাম কর্তৃক কংসবধ : কৃষ্ণকে হত্যা করার কৌশল হিসাবে কংসএকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এই আয়োজনে যোগদানের জন্য কংসঅক্রুর নামক এক যাদবকে পাঠান। এই আমন্ত্রণ কৃষ্ণ-বলরাম গ্রহণ করেন এবং কংসের দরবারের পথে রওনা দেন। পথে একজন কুব্জার সাথে দেখা হয়। কৃষ্ণা তাঁকে সুন্দরী নারীতে রূপান্তরিত করে দেন। এরপর কৃষ্ণ-বলরাম কংসকে হত্যা করে কংসের পিতা উগ্রসেনকে মথুরার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করেন।
শঙ্খাসুর হত্যা : কংস বধের পর কৃষ্ণ-বলরাম সান্দীপন নামক এক অস্ত্রগুরু কাছে কাছে ধনুর্বেদ ও আয়ুর্বেদ শেখেন। উল্লেখ্য প্রভাসতীর্থে স্নানের সময় পঞ্চজন নামক এক শঙ্খাসুর সান্দীপনের পুত্রকে সাগর গর্ভে নিয়ে যান। এই অসুর একটি বিশাল দুর্ভেদ্য শঙ্খের মধ্যে বসবাস করতেন। কৃষ্ণ-বলরামের শিক্ষা শেষে গুরুদক্ষিণা হিসাবে সান্দীপন কৃষ্ণ-বলরামের কাছে দাবী করেন যে- তাঁরা যেন শঙ্খাসুরকে হত্যা করে তাঁর পুত্রকে এনে দেন। এই দাবী অনুসারে কৃষ্ণ-বলরাম এই অসুরকে হত্যা করে মুনির পুত্রকে উদ্ধার করেন। এই অসুরের আবাসস্থলের শঙ্খ দিয়ে কৃষ্ণ পাঞ্চজন্য শঙ্খ তৈরি তা নিজের জন্য গ্রহণ করেন।
জরাসন্ধের সাথে দ্বন্দ্ব: কংসেরদুই স্ত্রী ছিলেন জরাসন্ধের দুই কন্যাঅস্তি ও প্রাপ্তি কৃষ্ণ কংসকে হত্যা করার পর জরাসন্ধ পর পর সতের বার মথুরা আক্রমণ করেন। কিন্তু রণ কৌশলের কারণে, মথুরা দখল করতে সক্ষম হন নি। বারবার আক্রমণে অতীষ্ট হয়ে কৃষ্ণ দ্বারকায় যাদবদের পুরী নির্মাণ করতে আদেশ দেন। কিন্তু যাদবরা দ্বারকায় যাবার আগেই জরাসন্ধ আবার মথুরা আক্রমণ করেন। এবার সঙ্গী ছিল কালযবন নামক এক কৃষ্ণ বিদ্বেষী রাজা। কৃষ্ণ এবার কালযবনকে হত্যা করার জন্য একটি কৌশলের আশ্রয় নিলেন। ইনি কালযবনকে কৌশলে দেখা দিলে, কালযবন কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য তাঁকে অনুসরণ করতে থাকে। কৃষ্ণ পলায়নের ভান করে দূরবর্তী এক পাহাড়ের গুহায় প্রবেশ করে। এই গুহায় মুচুকুন্দ নামক এক ঋষি ঘুমিয়ে ছিলেন। কালযবন কৃষ্ণের অনুসরণ করে উক্ত গুহায় প্রবেশ করে এবং অন্ধকারে মুচুকুন্দকে কৃষ্ণ মনে করে পদাঘাত করে। মুচুকুন্দ ঘুম ভেঙে কালযবনের দিকে দৃষ্টিপাত করা মাত্র- কালযবন ভষ্মীভূত হয়। এরপরজরাসন্ধ নিজেই আক্রমণ করতে এলে, জরাসন্ধের হংস নামক একজন অনুচর বলরামের হাতে নিহত হন। হংসের ভাই ডিম্বক এই দুঃখে যমুনা নদীতে আত্মহত্যা করেন। এই দুই বীরে মৃত্যুর পর জরাসন্ধ দুঃক্ষভারাক্রান্ত মনে নিজ রাজত্বে ফিরে যান।
রুক্মিণীকে বিবাহ : বিদর্ভরাজ ভীষ্মকের কন্যা রুক্মিণী কৃষ্ণকে মনে মনে পতিত্ব বরণ করে চরমুখে কৃষ্ণের কাছে বিবাহের প্রস্তাব দেয়। এই কারণে কৃষ্ণ, প্রথমে রুক্মিণীর পিতা ভীষ্মকের কাছে উপস্থিত হয়ে এই বিবাহে সম্মতি প্রার্থনা করেন। কিন্তু ভীষ্মক তাতে অসম্মতি জানান। এদিকে ভীষ্মক তার কন্যার জন্য স্বয়ংবর সভার আয়োজন করলে- কৃষ্ণ-বলরামকে সাথে নিয়ে, উক্ত সভা থেকে রুক্মিণীকে হরণ করেন। এই অপহরণ কালে শিশুপাল নামক একজন রাজা বাধা দিলে- সে কৃষ্ণের কাছে পরাজিত হয়ে স্বদেশে পলায়ন করে
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন